আমাদের প্রত্যেকের এক বা একাধিক নাম আছে। প্রতিটি নাম খুব সুন্দর। আমরা এই নামেই অন্যের কাছে পরিচিত। সাধারণত বাপ্তিস্ম বা নামকরণ অনুষ্ঠানের সময় আমাদের নামকরণ করা হয়। একেক জনের নামে আমরা অনেক আক্ষরিক অর্থ কিংবা সমার্থক শব্দ খুঁজে পাই। আবার অনেক নামের কিছু ঐতিহাসিক কিংবা অন্তর্নিহিত অর্থ থাকে। এসব নামের ব্যাখ্যা করলে অনেক তাৎপর্য খুঁজে পাওয়া যায়।
পবিত্র বাইবেলে এমন অনেক নাম আছে যেগুলোর সাথে কোনো ঘটনা বা ঈশ্বরের কোনো বিশেষ পরিকল্পনার সাথে মিল পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, 'মোশী' নামের অর্থ হলো জল থেকে টেনে তোলা। এই নাম ও এর অর্থ শুনলে সাথে সাথে আমাদের পবিত্র বাইবেলের একটি ঘটনার কথা মনে পড়ে। ঈশ্বরের মনোনীত ইস্রায়েল জাতি মিশরে ফারাও রাজার অধীনে দাসত্ব করেছিল। ইস্রায়েলীয়দের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় মিশররাজ ভয় পেয়েছিলেন। তাই রাজার আদেশে ইস্রায়েলীয়দের সমস্ত পুরুষ-সন্তানদের হত্যা করা হতো। মোশী ইস্রায়েল-সন্তান ছিলেন। তাঁর মা তাঁকে পানিতে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন যেন সৈন্যরা তাঁকে হত্যা করতে না পারে। পরে ফারাও-কন্যা নদীতে স্নান করতে গিয়ে নদীর নলখাগড়ার আড়ালে একটি শিশুর কান্না শুনতে পান। শিশুটি অত্যন্ত সুন্দর ছিল। তাঁকে তিনি জল থেকে তুলে এনে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। আর নাম দিয়েছিলেন মোশী। কারণ তাঁকে জল থেকে তুলে আনা হয়েছিল। এই মোশীই পরে তাঁর জাতিকে ফারাও রাজার দাসত্ব থেকে মুক্ত করেছিলেন। যাকে জল থেকে টেনে তোলা হয়েছিল তিনি তাঁর জাতিকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেছিলেন।
মোশীর দ্বারা ফারাও/ফৌরাণ রাজার দাসত্ব থেকে মুক্তি পেলেও ঈশ্বরের মনোনীত জাতি পাপের দাসত্ব থেকে মুক্ত হতে পারেনি। ঈশ্বর বিভিন্ন রাজা, বিচারক, যাজক, প্রবীণ ও প্রবক্তাদের দ্বারা তাঁর মনোনীত জাতিকে গঠন ও পরিচালনা করতে চেয়েছিলেন। অকৃতজ্ঞ মানুষেরা ঈশ্বরকে ভুলে গিয়েছিল। তারা বারংবার ঈশ্বরের বিরুদ্ধে পাপ করেছিল। সমগ্র মানবজাতিকে পাপের কালিমা থেকে উদ্ধার করতে ঈশ্বর তাই নিজেই এসেছেন মানুষের সাথে বাস করতে, মানুষকে পথ দেখাতে ও স্বর্গের পথে নিয়ে যেতে।
মারীয়ার গর্ভে তাঁর প্রিয়তম পুত্রকে প্রেরণের সময় ঈশ্বর একটি নাম দিয়েছিলেন। গাব্রিয়েল দূত মারীয়াকে বলেছিলেন, এই যে সন্তান, এর নাম হবে 'যীশু'। এই নামের অর্থ হলো 'ঈশ্বর উদ্ধার করেন'। এই নামেই ঈশ্বর নিজেকে উদ্ধারকর্তা হিসেবে মানুষের কাছে প্রকাশ করেছেন। তিনিই ক্ষমাশীল ঈশ্বর, যিনি মানুষকে উদ্ধার করতে এ জগতে নেমে এসেছেন। পুত্রের মধ্য দিয়ে ঈশ্বর তাঁর উপস্থিতি মানুষের কাছে প্রকাশ করেছেন। এই নামে ঈশ্বরপুত্র পরিচিত হয়েছেন। এই নাম সকল নামের শ্রেষ্ঠ নাম। কারণ এই নামেই মানবজাতি পরিত্রাণ পেয়েছে। এই নামেই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী, বাক প্রতিবন্ধী, কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত অনেকেই সুস্থ হয়েছে। এই নামেই অপদূত ভয়ে পালিয়েছে। এই নামেই মৃত জীবন পেয়েছে। আর এই নামের শক্তিতেই শিষ্যগণ যীশুর বাণী প্রচার করেছেন।
Read more